গত মার্চ মাস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঘরে বসে বসে সময় কাটাতে হচ্ছে লাখো শিক্ষার্থীকে। বৈশ্বিক মহামারী করোনায় যেন থেমে গেছে সবকিছু।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ভিন্ন ধারণা নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের "আইন" বিভাগের শিক্ষার্থী শারমিন নাহার নীতি।
তিনি ব্যবসা শুরু করেছেন ছাতু নিয়ে। শারমিন বলেন, আত্নীয় স্বজনেরা ঢাকায় থাকেন বলে তার মা নানিরা তাদের জন্য ছাতু বানিয়ে পাঠাতেন। একদিন এক ছাতুর প্যাকেট নিয়ে ছবি তুলে বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করেন। পোস্ট করার পর প্রথম ছাতুর অর্ডার পান নাটোরের বনপাড়া থেকে। সেই থেকে শুরু ছাতু নিয়ে পথচলা। ছোলার ছাতু, যবের ছাতু, বাদাম মিক্সড ছাতুসহ আরও ৯ রকমের ছাতু নিয়ে কাজ করছেন শারমিন। পুষ্টিগুণ অনেক বেশি পরিমাণ থাকায় অনেকে ছাতু পছন্দ করেন কিন্তু সময়ের অভাবে বানাতে পারেন না।
ছাতুতে প্রোটিনের পরিমাণ যেমন বেশি, তেমনি কার্বোহাইড্রেটও পাওয়া যায়। থাকে বিভিন্ন মিনারেলও। ১০০ গ্রাম ছাতুতে কার্বোহাইড্রেট থাকে প্রায় ৬০—৬৫ গ্রাম। ফলে শক্তির জোগান দেয় এটি। ছাতু খেলে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক ইত্যাদি খনিজের চাহিদাও পূরণ হয়ে যায়।
শারমিনের ছাতু এখন শুধু আর নিজ জেলায় না সারাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। শারমিন জানান, রাজশাহী, বরিশাল,খুলনা,কুষ্টিয়া, নাটোর,শিবগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা, বাসাবো,নরসিংদী ,নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, সৈয়দপুরে তার ছাতু বিস্তার লাভ করেছে।
গত ১ বছরে ১ লাখ টাকার বেশি ছাতু বিক্রয় করেছেন। ব্যবসায়ের টাকা দিয়ে তিনি ওয়েট মেশিন ও সিল মেশিন কিনেছেন। শারমিন শুধু ছাতু না, এর পাশাপাশি পঞ্চতেল ও চুলের প্যাক নিয়েও ব্যবসা করেন তবে ছাতু ইউনিক প্রোডাক্ট হওয়ার কারণে ছাতুর মাধ্যমে সফলতা অর্জন করেছেন।
শুরুর দিকে প্রতিবেশী ও আত্নীয় স্বজন ছাতু নিয়ে ব্যবসা করার ফলে হাসি তামাশা করতো, বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে হয়ে ছাতুর ব্যবসা করে বলে অনেক হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে বলে শারমিন জানান। তবে এখন শারমিনের সফলতা দেখে অনেকে তার কাছে ছাতুর ব্যবসা সম্পর্কে জানতে আসেন। পরিবার থেকে তিনি প্রচুর সমর্থন পেয়েছেন। এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে খ্যাত।
তার সফলতার পেছনে " চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডিভাস " গ্রুপকে তিনি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ দিতে চান। ফেসবুকে " রকমারি হাউজ " নামে একটি পেইজ আছে সেখান থেকে যাবতীয় অর্ডার ক্রেতাদের কাছে গ্রহণ করেন বলে জানা শারমিন।
করোনা পরবর্তীতে সময়ে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকতে চায় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে শারমিন জানান, ভবিষ্যতে ব্যবসা নিয়েই পথ চলতে চাই। শারমিন তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এখন এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
চাঁপাই পোস্ট ডেস্ক
তাহসিন মিম,
শিক্ষার্থী, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়